বছরের শেষ রাতে আব্বাকে খুজি


ময়নুল আল মামুন

বছরের শেষ রাত। সময়ের পেছনে ফিরে তাকাতে ইচ্ছে করে। যেন টিভির রিমোট হাতে নিয়ে একটার পর একটা দিন ঘুরিয়ে দেখছি। সেই দিনগুলো, যেখানে জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে নির্ভরতার একটিই নাম ছিল, আব্বা।

১০ জানুয়ারি ১৯৯১ থেকে ১৩ নভেম্বর ২০২৫ এই দীর্ঘ সময়জুড়ে তিনি ছিলেন। ছিলেন ছায়ার মতো, নীরব শক্তির মতো। কিন্তু ডিসেম্বরের এই শেষপ্রান্তে এসে, মনের চিলেকোঠার দরজা খুলতেই দেখি আব্বা আর নেই। সব মায়া, সব বন্ধন ছিন্ন করে তিনি চলে গেছেন। হয়তো এখন আকাশের কোনো এক তারা হয়ে দূর থেকে আমাদের দেখছেন।

নতুন বছরের শুরুটা তাই আনন্দের নয়, বরং এক গভীর শূন্যতার নাম। আব্বা না থাকার এই অপূর্ণতা আমাকে প্রতিদিন, প্রতিমুহূর্তে অসহায় করে তোলে। অনেক সময় মনে হয়, বুকের ভেতর একটা শূন্য ঘর যেখানে শব্দ নেই, আলো নেই, শুধু দীর্ঘশ্বাস।

আম্মা আর বোনদের মুখে শুনেছি আমাকে পাওয়ার জন্য আমার আব্বা নাকি দীর্ঘ এক মাস সেহরি না খেয়ে রোজা রেখেছিলেন। একজন বাবার ভালোবাসা যে কতটা নিঃশব্দ আর গভীর হতে পারে, এই কথাটা তার প্রমাণ। সেই ত্যাগের কথা ভাবলে আজও চোখ ভিজে যায়। আব্বাকে যদি ফিরে পাওয়া যেত, আমি আজ থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সেহরি না খেয়ে রোজা রাখতাম। কিন্তু নিয়তির নির্মম সত্য আব্বা আর কোনো দিন ফিরে আসবেন না।

বছরের শেষ রাতে তাই কোনো উৎসব নেই, কোনো উল্লাস নেই। আছে শুধু স্মৃতি, দোয়া আর দীর্ঘ নীরবতা। যে নীরবতার ভেতর বারবার উচ্চারিত হয় একটি শব্দ আব্বা।

দয়াময় আল্লাহর কাছে একটাই ফরিয়াদ হে আল্লাহ, আমার আব্বাকে ক্ষমা করে দাও। তাঁর সকল ভুলত্রুটি মাফ করে জান্নাতের সু-উচ্চ মাকাম নসিব করো। তাঁকে এমন এক জায়গায় রেখো, যেখানে কোনো কষ্ট নেই, কোনো বিচ্ছেদ নেই, শুধু শান্তি আর অনন্ত প্রশান্তি।

ময়নুল আল মামুন
দরিয়াবাজ,
জকিগঞ্জ সদর ইউনিয়ন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতরপূর্বতন