শেষ মুহুর্তের আলোচনায় হুছামুদ্দীন - মাসুকউদ্দীন

নিরুত্তাপ নির্বাচনে কেটলি মার্কার প্রতি সাধারণ মানুষের বাধভাঙ্গা উচ্ছ্বাস


জুবায়ের আহমদ, জকিগঞ্জ থেকে:
দেশের অন্যান্য আসনের তুলনায় সিলেট-৫ (জকিগঞ্জ-কানাইঘাট) আসনে এবারের নির্বাচন বেশ আলাদা চিত্র উপস্থাপন করছে। সারাদেশে যেখানে নির্বাচনী মাঠে তেমন উত্তাপ নেই, সেখানে এই আসনে ভোটারদের মধ্যে এক অনন্য উচ্ছ্বাস ও আগ্রহ তৈরি হয়েছে।


এর কেন্দ্রবিন্দুতে আছেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম, আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (রহ.)–এর সুযোগ্য সন্তান, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ইসলামিক স্কলার ও সমাজসেবক মাওলানা হুছামুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী

দলমত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষ তাঁকে ঘিরে এক ধরনের অনন্য আবেগ প্রকাশ করছেন। নির্বাচনের শুরুতে যেখানে ভোট বর্জনের সুর ছিল প্রবল, সেখানে এই স্বতন্ত্র প্রার্থীর মাঠে নামায় ভোটের পরিবেশে এসেছে উৎসবের আমেজ।
মাওলানা হুছামুদ্দীনের নির্বাচনী বক্তব্যে সাধারণ মানুষের আশা আরও জোরদার হয়েছে— তিনি বলেছেন, “অধিকারবঞ্চিত ও নিপীড়িত মানুষের কথা সংসদে তুলে ধরাই আমার লক্ষ্য।”

দুই প্রতীকের মূল লড়াই

বর্তমানে এ আসনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে উঠেছে দুটি প্রতীককে ঘিরে— নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ ও কেটলি প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী মাওলানা হুছামুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী

প্রথম দিকে সীমান্তিকের আহমদ আল কবিরকে নিয়েও ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্ভাবনা দেখা গেলেও তিনি ধীরে ধীরে মাঠ থেকে পিছিয়ে পড়েছেন। এনজিও কার্যক্রমে নানা অভিযোগ ও ভোটারদের অনাগ্রহের কারণে তাঁর অবস্থান এখন দুর্বল।

অন্যদিকে, স্থানীয়ভাবে দেখা যাচ্ছে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের একটি অংশ প্রকাশ্যেই মাওলানা হুছামুদ্দীনের পক্ষে কাজ করছে। বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনে অংশ না নিলেও তাঁদের অনেক অনুসারীও কেটলি প্রতীকের প্রতি সহানুভূতিশীল।


জাতীয় পার্টির প্রার্থী শাব্বির আহমদ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোয় তাঁর সমর্থক দলের অনেকেই শেষ সময়ে হুছামুদ্দীনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন।

ভোটারদের হিসাব-নিকাশ

ভোটারদের ধারণা, এবার মূল লড়াই হবে হুছামুদ্দীন ও মাসুক উদ্দীনের মধ্যে। জকিগঞ্জ উপজেলায় কেটলি প্রতীকের জনপ্রিয়তা দৃশ্যমান, অপরদিকে কানাইঘাট উপজেলায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী মাসুক উদ্দীনের শক্ত ঘাঁটি রয়েছে।


স্থানীয় পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন— কানাইঘাটের ভোটের ফলাফলই এবার জয়-পরাজয়ের পার্থক্য গড়ে দেবে।

ইতিহাসের ধারাবাহিকতা

সিলেট-৫ আসন বরাবরই ইসলামপ্রিয় জনপদের প্রতিনিধিত্ব করে। পাকিস্তান আমল থেকে শুরু করে স্বাধীনতার পর পর্যন্ত প্রায় প্রতিটি নির্বাচনে এই আসন থেকে আলেম-উলামারা সরাসরি বা পরোক্ষভাবে বিজয়ী হয়েছেন।


১৯৬২ সালে আল্লামা মুশাহিদ বায়মপুরী (রহ.), ১৯৯১ সালে শায়খুল হাদীস উবায়দুল হক উজিরপুরী (রহ.) এবং ২০০১ সালে অধ্যক্ষ ফরীদউদ্দীন চৌধুরী নির্বাচিত হন। এই ধারাবাহিকতায় এবারও ইসলামি চেতনার প্রতিনিধি হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন মাওলানা হুছামুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী।

আলেম সমাজের ঐক্য ও জনআস্থা

জকিগঞ্জ-কানাইঘাটের কওমী, আলিয়া, এমনকি বিভিন্ন তরিকার পীর-মাশায়েখরাও তাঁর পক্ষে সমর্থন প্রকাশ করেছেন। বিশেষভাবে আলোচিত রায়পুরী ছাহেববাড়ীর সমর্থন এবার একটি ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে— প্রথমবারের মতো ঐ পরিবার কেটলি মার্কার সমর্থনে প্রকাশ্যে সভা করেছে।


এছাড়া কাজলসার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আশরাফুল আম্বিয়া, কানাইঘাটের ইউনিয়ন চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিনসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের একাংশও হুছামুদ্দীনের পক্ষে মাঠে নেমেছেন।

প্রার্থীদের বক্তব্য

যোগাযোগ করলে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মাসুক উদ্দিন আহমদ বলেন, “দলের সব নেতাকর্মী ঐক্যবদ্ধভাবে নৌকার পক্ষে কাজ করছেন। কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা থাকলেও তা ফলাফলে প্রভাব ফেলবে না।”

অন্যদিকে, স্বতন্ত্র প্রার্থী মাওলানা হুছামুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী বলেন, “আমি ব্যক্তিগত আগ্রহে নয়, মানুষের আহ্বানে নির্বাচনে নেমেছি। আলেম-উলামা ও জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে পাশে আছেন। নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু ভোট হলে ইনশাআল্লাহ আমি বিপুল ভোটে জয়ী হবো।”

তিনি আরও বলেন, “নির্বাচিত হলে মাদ্রাসা শিক্ষার স্বকীয়তা রক্ষা, পাঠ্যপুস্তক থেকে ইসলামবিরোধী বিষয় দূরীকরণ এবং ধর্মীয় শিক্ষার মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সংসদে সাহসী ভূমিকা রাখবো।”

শেষ পর্যায়ের প্রচারণা

প্রচারণা বন্ধের পরও দুই প্রার্থীর শিবিরে চলছে নীরব গণসংযোগ। মাঠে দেখা গেছে, মাওলানা হুছামুদ্দীনের শালীন প্রচারণা ও সৌজন্যমূলক আচরণ সাধারণ মানুষের মনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তিনি তাঁর অনুসারীদের নির্দেশ দিয়েছেন— “প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে কোনো অসম্মানজনক কথা নয়, আদর্শের পথে থাকুন।”

ভোটারদের আশা

জকিগঞ্জ-কানাইঘাটের ধর্মপ্রাণ মানুষ এখন একটাই প্রত্যাশা করছে— শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। সবার মুখে একই কথা, “হুছামুদ্দীন চৌধুরীর মতো সৎ ও শিক্ষিত আলেম সংসদে গেলে এ অঞ্চলের মুখ উজ্জ্বল হবে।”

সারাদেশে নিরুত্তাপ নির্বাচনের মধ্যেও সিলেট-৫ আসনের এই প্রাণচাঞ্চল্য এখন বৃহত্তর সিলেটজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।

1মন্তব্যসমূহ

  1. ইনশাআল্লাহ মাওলানা হুছাম উদ্দীন চৌধুরী বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন

    উত্তরমুছুন
নবীনতরপূর্বতন